ঢাকা মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫ পৌষ ১৪৩২
মুক্ত মনমুক্ত চিন্তামুক্তি গাথা

হাসনাবাদ গণহত্যা (নবাবগঞ্জ, ঢাকা)

প্রিয়ভূমি প্রতিবেদক
প্রকাশ : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:১২ পিএম
হাসনাবাদ গণহত্যা (নবাবগঞ্জ, ঢাকা)

১৯৭১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর নবাবগঞ্জ উপজেলার হাসনাবাদে সংঘটিত গণহত্যায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীদের হাতে ১২ জন নিরীহ গ্রামবাসী শহীদ হন। এই নৃশংস ঘটনা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি বেদনাদায়ক অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে।

ঘটনার বিবরণ

ঘটনার দিন পাকিস্তানি সৈন্যরা পার্শ্ববর্তী দোহার থানা হেডকোয়ার্টার্স থেকে মার্চ করে এসে নবাবগঞ্জের হাসনাবাদে পৌঁছে। তারা পথে দোহার থানার পশ্চিম-উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি গ্রাম ও জনপদ অতিক্রম করে। এ সময় তারা ইছামতি নদীবিধৌত ফারি ইক্রাশী ও কাঁচারীঘাট বাজারে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়। স্থানীয় রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর সহায়তায় তারা ইক্রাশী ও কাঁচারীঘাটের হিন্দু ও খ্রিস্টান পল্লীতে হামলা করে। এরপর তারা উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে নবাবগঞ্জ থানার হাসনাবাদের হিন্দু পালপাড়া ও খ্রিস্টান পল্লীতে আক্রমণ চালায়।

পাকিস্তানি সৈন্যরা তাদের সহযোগীদের সহায়তায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে গানপাউডার ব্যবহার করে অগ্নিসংযোগ করে এবং ব্যাপক লুটপাট চালায়। এ সময় তারা বেশ কয়েকজন নারী ও শিশুর ওপর নির্মম নির্যাতন করে। আক্রমণের এক পর্যায়ে তারা হাসনাবাদ গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের ১২ জনকে কাঁচারীঘাটে নদীতীরে নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে। এই নৃশংসতার পর পার্শ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দারা প্রাণভয়ে পালিয়ে যান।

শহীদদের পরিচয়

হাসনাবাদ গণহত্যায় শহীদ ১২ জনের মধ্যে ১১ জনের পরিচয় জানা গেছে। তারা হলেন:

  • ব্রজেন পাল (পিতা: বৃন্দাবন পাল, হাসনাবাদ)
  • গৌরাঙ্গ পাল (পিতা: কালিচরণ পাল, হাসনাবাদ)
  • ধীরেন পাল (পিতা: সাধু পাল, হাসনাবাদ)
  • শংকর পাল (পিতা: নরেশ পাল, হাসনাবাদ)
  • মাধব সূত্রধর (পিতা: যতীন্দ্র সূত্রধর, হাসনাবাদ)
  • দিলীপ সূত্রধর (পিতা: ত্রৈলক্ষ্য সূত্রধর, হাসনাবাদ)
  • মনোরঞ্জন পাল (হাসনাবাদ)
  • পুলহাত পাল (পিতা: সতীশ পাল, হাসনাবাদ)
  • সুদর্শন পাল (হাসনাবাদ)
  • গোবিন্দ সাহা (নতুন বান্দুরা)
  • অনীল গমেজ (পিতা: পিটার গমেজ, মোলাশীকান্দা)

এই গণহত্যার পর শহীদদের লাশ সমাহিত করার মতো কেউ আশেপাশে ছিল না। ফলে তাদের দেহগুলো নদীতে নিমজ্জিত থাকে এবং এক থেকে দুই দিন পর নদীর স্রোতে ভেসে যায়।

পরিণতি

হাসনাবাদ গণহত্যা মুক্তিযুদ্ধের সময় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর পরিকল্পিত নৃশংসতার একটি জ্বলন্ত উদাহরণ। এই ঘটনা স্থানীয় জনগণের মনে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি বেদনাদায়ক স্মৃতি হিসেবে রয়ে গেছে।

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, ১০ম খণ্ড (মো. আনোয়ার হোসেন ও আব্দুল মালেক সিকদার)

অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

একতারার কান্না ও অঙ্গার হওয়া শৈশব: বাংলাদেশ কি তবে অন্ধকারের মরণফাঁদে?

রাজনীতির দাবা খেলা / নিয়োগকর্তারা সব চলে গেলেন, কিন্তু নিয়োগ বহাল থাকল

মহান বিজয় দিবস: গৌরবের দিনে প্রশ্নের ছায়া

১৫ ডিসেম্বর ১৯৭১: মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ের এক ঘটনাবহুল দিন

পরের নোবেলটি কার? ইউনুস না শফিক?

এই পতাকা কাদের? / কে চেয়েছে এই পতাকা???

এখন আমাদের ত্রাণকর্তা কে? / ইউনুস, ডোভাল না রজার???

৪ অক্টোবর ১৯৭১: বিনা শর্তে বঙ্গবন্ধুর মুক্তি দাবি মধ্যপ্রদেশের বিধানসভায়

১ অক্টোবর ১৯৭১: রায়পুরের রাজাকার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গেরিলাদের আক্রমণ

হাসনাবাদ গণহত্যা (নবাবগঞ্জ, ঢাকা)

১০

কাটেঙ্গা গণহত্যা (ডুমুরিয়া, খুলনা)

১১

৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: ‘পূর্ব বাংলার সমস্যার সমাধান শেখ মুজিবের সঙ্গেই করতে হবে’

১২

২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: “বিদেশি চাপে আমাদের বহু চেষ্টা নস্যাত হয়ে গেছে”

১৩

২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: জাতিসংঘে বাংলাদেশ নিয়ে নাটকীয়তা

১৪

সাদকপুর গণহত্যা (বুড়িচং, কুমিল্লা)

১৫

ফুলদহেরপাড়া গণহত্যা (সরিষাবাড়ী, জামালপুর)

১৬

আন্দুলিয়া গণহত্যা (ডুমুরিয়া, খুলনা)

১৭

২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: বিজয়ই আমাদের একমাত্র ও চূড়ান্ত গন্তব্য

১৮

জুলাই অভ্যুত্থানের প্রতারণা: জনগণের অট্টহাসি ও অবিশ্বাসের প্রতিফলন

১৯

২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: চালনা বন্দরে মার্কিন জাহাজ মাইন বিস্ফোরণে ধ্বংস

২০